যুদ্ধ থেমেছে কী?
যুথিকা দাস,
০২/০৪/১৯
____________________________________
বসন্তবেলা, গাছের ডালে ফুলের সুবাস আর মৌমাছিদের গুঞ্জন, কোকিলের মধু তান
পাশে বসে মরিয়ম স্বামীকে বলে, কেন?
কেন? এ দেশ কী শুধু তোমার?
তোমাকে কত করে বললাম যেওনা
তোমার মরিয়মকে ছেড়ে।
করিম আলী বলে, আরে মরিয়ম
এই তো কটা দিন, যুদ্ধ শেষ হলেই চলে আসব,
চিন্তা করোনা, ছেলেকে বুকে নিয়ে
কষ্ট করো কটা দিন, পরে আমরা স্বাধীন হব।
হ্যাঁ গো স্বাধীন হবে আমাদের দেশ।
হায় রে, আজ দেশ স্বাধীন হল
যুদ্ধ থামলো, কিন্তু করিমআলী আর এলোনা।
রাতের আঁধারে মরিয়ম শোনে
করিমের বুকের স্পন্দন, নাকের নিঃশ্বাস,
মরিয়ম জেগে উঠে, তবে দেখতে পায়না করিমকে।
কি গো, ফিরেছ ? তোমার কটা দিন কি শেষ হল?
তোমার ছেলেটা এখন বড় হয়েছে,
ভিক্ষে করে তোমার মরিয়মের পেটেরভাত জুটেনা,
তবুও সে ছেলেকে পড়িয়েছে, ভিটে বন্দক দিয়ে,
গ্রামের ভেলা পঞ্চায়েতের কাছে।
তোমার ছেলে কে সবাই মাস্টার বলে গো এখন,
তোমার মরিয়মের মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে,
হাতের চুড়িতে ভারি লাগে, আর নাকের নোলক?
সে এখনও আছে, ফাঁসির দড়ির মতো ঝুলে।
চোখের পাতায় ঘুম আসে না
এখন গভীর রাতের নিস্তব্দ অন্ধকারে
বর্ষার ভেকের রবে, ভয় পায় তোমার মরিয়ম।
ভয়ে কুকড়ে যায় , হাত বাড়ায় জড়িয়ে ধরতে
হাতড়াতে থাকে অন্ধকারে হাতদুটি ভীতু,
নিস্তব্ধ রাতে পায়ের আওয়াজ শোনে
চারদিকে! কে এল? ভাবি করিম এল!
নাগো ওরা, সে হায়নাদের দল, তঞ্চুকের দল,
যাদের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে তুমি!
লোকে বলাবলি করে তুমি নাকি আর নেই
যুদ্ধের সময় নাকি মরে গেছ?
সরকারের মরা মানুষের নামের তালিকা দেখি!
কোথাও, কোত্থাও তোমার নামটা তো দেখিনা,
কোথায়? কে বলে তুমি যুদ্ধে মরেছ?
মরতে হলে তো বলেছিলে একই সাথে মরব!
আমি আছি এখনও, তুমি আসবে কখনও করিম?
আমি রাতের বেলা চালার ফাঁকে আকাশও দেখি
অনেক তারাকেও দেখি, তুমি কি তারা হয়ে গেলে?
অভাবের জ্বালায় বন্দকী ভিটে ফিরাতে পারিনি,
আজও, সেই পুরানো ভিটে ভাঙা চালের ঘরে,
তোমার ছেলে এখন মাস্টার! বাচ্চাদের পড়ায়।
আমি শুধু পাটের মতো সাদা চুলে
চোখে মোটা চশমা পরে এখনও পথ চেয়ে থাকি,
করিম! আর কত অপেক্ষা করব বল?
একটি বার বলে দিলে তুমি মুক্তি পাবে করিম!
বুঝবো, আমার করিম, যুদ্ধ করছে আজও।
দেশ স্বাধীন হবে, কখন তুমি আসবে,
কবে আমরা স্বাধীন হব করিম ?
______________________________________
রচনাকাল
৩১/০৩/১৮
যুথিকা দাস,
০২/০৪/১৯
____________________________________
বসন্তবেলা, গাছের ডালে ফুলের সুবাস আর মৌমাছিদের গুঞ্জন, কোকিলের মধু তান
পাশে বসে মরিয়ম স্বামীকে বলে, কেন?
কেন? এ দেশ কী শুধু তোমার?
তোমাকে কত করে বললাম যেওনা
তোমার মরিয়মকে ছেড়ে।
করিম আলী বলে, আরে মরিয়ম
এই তো কটা দিন, যুদ্ধ শেষ হলেই চলে আসব,
চিন্তা করোনা, ছেলেকে বুকে নিয়ে
কষ্ট করো কটা দিন, পরে আমরা স্বাধীন হব।
হ্যাঁ গো স্বাধীন হবে আমাদের দেশ।
হায় রে, আজ দেশ স্বাধীন হল
যুদ্ধ থামলো, কিন্তু করিমআলী আর এলোনা।
রাতের আঁধারে মরিয়ম শোনে
করিমের বুকের স্পন্দন, নাকের নিঃশ্বাস,
মরিয়ম জেগে উঠে, তবে দেখতে পায়না করিমকে।
কি গো, ফিরেছ ? তোমার কটা দিন কি শেষ হল?
তোমার ছেলেটা এখন বড় হয়েছে,
ভিক্ষে করে তোমার মরিয়মের পেটেরভাত জুটেনা,
তবুও সে ছেলেকে পড়িয়েছে, ভিটে বন্দক দিয়ে,
গ্রামের ভেলা পঞ্চায়েতের কাছে।
তোমার ছেলে কে সবাই মাস্টার বলে গো এখন,
তোমার মরিয়মের মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে,
হাতের চুড়িতে ভারি লাগে, আর নাকের নোলক?
সে এখনও আছে, ফাঁসির দড়ির মতো ঝুলে।
চোখের পাতায় ঘুম আসে না
এখন গভীর রাতের নিস্তব্দ অন্ধকারে
বর্ষার ভেকের রবে, ভয় পায় তোমার মরিয়ম।
ভয়ে কুকড়ে যায় , হাত বাড়ায় জড়িয়ে ধরতে
হাতড়াতে থাকে অন্ধকারে হাতদুটি ভীতু,
নিস্তব্ধ রাতে পায়ের আওয়াজ শোনে
চারদিকে! কে এল? ভাবি করিম এল!
নাগো ওরা, সে হায়নাদের দল, তঞ্চুকের দল,
যাদের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে তুমি!
লোকে বলাবলি করে তুমি নাকি আর নেই
যুদ্ধের সময় নাকি মরে গেছ?
সরকারের মরা মানুষের নামের তালিকা দেখি!
কোথাও, কোত্থাও তোমার নামটা তো দেখিনা,
কোথায়? কে বলে তুমি যুদ্ধে মরেছ?
মরতে হলে তো বলেছিলে একই সাথে মরব!
আমি আছি এখনও, তুমি আসবে কখনও করিম?
আমি রাতের বেলা চালার ফাঁকে আকাশও দেখি
অনেক তারাকেও দেখি, তুমি কি তারা হয়ে গেলে?
অভাবের জ্বালায় বন্দকী ভিটে ফিরাতে পারিনি,
আজও, সেই পুরানো ভিটে ভাঙা চালের ঘরে,
তোমার ছেলে এখন মাস্টার! বাচ্চাদের পড়ায়।
আমি শুধু পাটের মতো সাদা চুলে
চোখে মোটা চশমা পরে এখনও পথ চেয়ে থাকি,
করিম! আর কত অপেক্ষা করব বল?
একটি বার বলে দিলে তুমি মুক্তি পাবে করিম!
বুঝবো, আমার করিম, যুদ্ধ করছে আজও।
দেশ স্বাধীন হবে, কখন তুমি আসবে,
কবে আমরা স্বাধীন হব করিম ?
______________________________________
রচনাকাল
৩১/০৩/১৮
Comments
Post a Comment