আমি সেই মেয়ে

আমি সেই মেয়ে,
যুথিকা দাস,
০৫/০৮/১৮
_________________________
আমি উনুনের খড়িকাট আহরণ থেকে
পুকুরে মাছ শিকারও করতে জানি,
কি করে বরশিতে টোপ ফেলতে হয়,
কি করে জাল বুনতে হয় তাও জানি,
আমি সেই মেয়ে,
যে অজ পাড়া গাঁয়ে ভোরের আলো
ফোটার আগেই পাহাড়ি পথে
কিংবা প্রখর রোদে নগ্ন পায়ে হাটতে জানে।
আমি পদ্মপুকুরে শাপলা ফুলের তলা থেকে
শিকড় তুলতে জানি,
আমি সেই মেয়ে!
আমি সেই মেয়ে যার রূপ ছিল, না মেধা,
না ছিল শৌখিনতা, বিলাসিতাও  না।
স্কুলমাস্টার কম মাইনে বাবার আদরের মেয়ে,
ছেলেবেলা মাসির পায়েল চুরি হয়েছে বলে
অভিযুক্ত হয়েছিলাম, মাসি বলেছিল তুই নিয়েছিস,
বিনিময়ে বলেছিলাম বাবা খাইয়েছেন
পরিয়েছেন, তাই বলে চুরি শেখাননি,
গাছের  বাকল পরা শিখিয়েছেন
তবু অন্যের জিনিষে লোভ শেখান নি!
পাঁচ ভাইবোনের প্রথম মেয়ে,
আমি সেই মেয়ে।
অভাবের তাড়সে গয়না পরিনি বলে
প্রত্যাশা নেই, মায়ের শেখানো সেলাই,
বিদ্যা শিক্ষা আমাকে অনেক অলংকার দিয়েছে,
যা রাখতে হয়না আলমারিরতে
যা পরতে হয়না হাতে কি কানে,
যা শুধু উজ্জ্বল করেছিল আমার মুখ!
আমার সভ্যতার মুখ, মায়ের মুখ
আমার আবোলা মানুষের মুখ,
গেঁয়ো মানুষের কণ্ঠের গান হয়ে না ভাসা,
হরফ গুলো শিখে নিয়েছি,আমি
আমি সেই মেয়ে।
যার পড়ার পুঁথির অভাবে পড়া হয়নি
সবে দশ ক্লাস পাস করেছিল,
মাতুলরা মাসীরা ধনী হলে কি
কাকারা প্রতিবেশী আভিজাত্য,
গরীবের আবার আত্মীয়তা আছে কি?
ওরা দেখলেই ভাবেন এই তো নিতে এসছে বুঝি,
আমি জীবনযুদ্ধে হাড় কালো করা মানুষ,
আমি সেই মেয়ে।
আমি সেই মেয়ে যাকে শ্বশুড়ঘরে
যৌতুকের দায়ে উপোষ করতে হয়েছিল প্রায় রাতে।
আমি সেই পদ্মপুকুরের শাপলা তোলা মেয়ে!
যাকে রান্না ঘরে আটকে রাখা হত
মারের ভয়ে গাঁ পালিয়ে যাওয়া আমি সেই,
আমি সেই মেয়ে!
আমি কবিতা লিখতে জানি
মনের কথা বলতে জানি,
কেউ শুনলেও বলি না শুনলেও বলি,
গ্রহের ফেরে স্বামীস্বজ্জন হারালেও
বিশ্বের সব পিতারাই ভাবেন তাদের মেয়ে,
বিশ্বের সকল ভাইরা ভাবেন তাদের দিদি
কেউ ভাবেন বোন, কেউ বা ভাবেন বন্ধু!
আমি সেই মেয়ে,
আম কুড়াতে গিয়ে কুকুরে তাড়া করেছিল,
অনেকে প্রস্তাব করেছিল জীবন সঙ্গী হতে
আমি সেই মেয়ে যার কপালে সাদা টিপ,
পরনে সাদা মাটা কম দামের কাপড়,
ঘর বা বাইরে একই পোষাকে যার পরিচয়,
নিজের দক্ষতায় নিজ পায়ে ভর করে চলে
আমি সেই মেয়ে,
যাকে পায়ে হেঁটে অনেক পথ পাড়ি দিতে হত
স্কুলের বা কলেজের শিক্ষা নিতে,
রাতের গভীরে গাড়ি থেকে নাবলে
গায়ের মুরব্বীরাও শিউরে উঠত বলত,
রাতেও কি স্কুলে পড়ানো হয়?
আমি সেই মেয়ে,
যে স্কুল জীবনে পায়ে চটি পরেনি,
সমাজ কি দিল তাকে, মানুষ কি দিল?
অপবাদ, অপমান নারী হয়েছিল বলে!
প্রেমের নামে ঠকিয়েছে অনেক পুরুষ,
চরুটের ধোয়ার মতো স্বপ্ন উড়ে
সামনে শুধু গাঁদাগাঁদা সুখের রাশি
যা সিন্দুকে রাখলে চুরি যাবে,
পকেটে রাখলে হারিয়ে যাবে,
এখনও সে সেই মেয়ে
ধর্ষিতা হয় খুন হয়, লাঞ্ছিত হয়, মানসিকে
সভা সমিতি কিবা কোনো কবি মহলে!
বোদ্ধা সমাজে, কোনো ন্যায়ের পথে,
আমি সেই, আমি সেই মেয়ে
আজও পথ হাঁটে খালি পায়ে
বাঁচার তরে লড়াই করে বাঁচব বলে,
স্বরের ভগ্নতাকে রুকে দাড়াতে,
সভ্যতার ভাঙন রোধে,
জাতির উন্নতির সোপানের পর সোপানে
আমি রক্তাক্ত হয়ে পড়ি পথে, ঘাটে, দুয়ারে,
আমি সেই মেয়ে, আমি!
___________________________________
রচনাকাল
৩০/০৭/১৮

Comments

Popular posts from this blog

পুরুষের অভিধান

আজ ১৯ শে মে, বরাকের মাতৃভাষা শহীদ দিবসে জানাই শ্রদ্ধাবনত শিরে তাঁদের জানাই অশ্রুসিক্ত প্রণাম।